মঙ্গলবার, ১৯ অগাস্ট ২০২৫, ০২:০০ অপরাহ্ন

রানীনগের খাল খননে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ

নওগাঁ প্রতিনিধি:

নওগাঁর রানীনগের খরা মৌসুমে খালে পানি সংরক্ষন এবং কৃষি জমিতে পানি সেচের সুবধিার্থে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) আওতায় খাল খননের কার্যক্রম চলছে। নিয়ম মোতাবেক কাজ না হওয়ায় ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। খাল থেকে পানি সেচ করে খননের কথা থাকলেও পানির মধ্য থেকেই স্ক্যাবেটর মেশিন দিয়ে খনন করা হচ্ছে। কি পরিমাণ খনন কাজ হচ্ছে তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। অপরদিকে খননকৃত মাটি খালের পাড়ে রাখার ফলে কৃষকদের চলাচলের অসুবিধা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন স্থানীয় এলাকাবাসী ও কৃষকরা।

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার কুজাইল রেগুলেটর থেকে সরগরামপুর ও সাদোকালীর মাঠ (বিল) হয়ে রেলওয়ে চকের ব্রীজ চকবলরাম পর্যন্ত সাড়ে ৬ কিলোমিটার খাল খননের কাজ চলছে। কাজের বরাদ্দ ধরা হয়েছে ১ কোটি ৪৬ লাখ ৬২ হাজার টাকা। খনন করা হবে খালের তলা ১০ মিটার, স্থানভেদে সাবেক গভীরতা ১ মিটার বা তার কম এবং উপরের দিকে গড় ১৮-২০ মিটার। এ উপজেলার কাশিমপুর ও গোনা ইউনিয়নের কুজাইল, দূর্গাপুর, সরগরামপুর, ভবানিপুর, এনায়েতপুর, গোনা ও খট্টেশ্বর গ্রামের প্রায় ৫০হাজার কৃষকদের একটিমাত্র ফসল ইরি-বোরো। খরা মৌসুমে খালে পানি থাকে না। ফলে জমিতে ঠিকমতো পানি দেয়া সম্ভব হয়না। তাই খরা মৌসুমে খালে পানি সংরক্ষনে রাখতে খাল খনন করা হচ্ছে। পানি শুকিয়ে খাল খনন করার কথা থাকলেও তা করা হচ্ছেনা। আবার খননকৃত মাটি খালের পাড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফেলা হচ্ছে। বর্ষা মৌসুমে খালের পাড়ে রাখা মাটি আবারও খালে পড়ে ভরাট হয়ে যাবে। তবে কাজের শুরু থেকেই খাল খননে ব্যাপক অনিয়ম করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন স্থানীয় এলাকাবাসী। তারা বলছেন, খাল খননে যে পরিমাণ বরাদ্দ করা হয়েছে তার অর্ধেক টাকা খরচ হবে না।

দূর্গাপুর গ্রামের কৃষক আজিজার রহমান বলেন, খাল যে পরিমান গভীর করার কথা তা করা হচ্ছেনা। খালে পানি রেখেই মাটি কাটা হচ্ছে। পানির মধ্য থেকে কি পরিমান মাটি কাটা হচ্ছে তা বুঝা যাচ্ছে না। ধারনার উপর স্ক্যাবিটর দিয়ে পানির মধ্য থেকে মাটি কাটা হচ্ছে। আর খালের তলা তো সমান হওয়ার প্রশ্নই আসেনা। খরা মৌসুমে পানি থাকার কথা থাকলেও তা হবেনা। এতে সরকারের যে উদ্যেশ্য তা ভেস্তে যাবে।

সরগরামপুর গ্রামের কৃষক খাজা মন্ডল, মুনছুর সহ কয়েকজন বলেন, পাড় কেটে খালে নামিয়ে দিয়ে এরপর আবার মাটি পাড়ে রেখে দেয়া হচ্ছে। নদীর মধ্য থেকে মাটি কাটা হচ্ছেনা। খাল খননে মেলা টাকা বরাদ্দ হয়েছে। আর যে ভাবে খাল খনন করা হচ্ছে, তাতে হয়ত অর্ধেক টাকাই খরচ হবেনা। এখন ধান কাটার ভরা মৌসুম। মাঠ থেকে ধান কাটার পর খালের পাড় দিয়ে কৃষকদের আসা-যাওয়া করতে হয়। খালের পাড়ে যে ভাবে মাটি ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা হয়েছে ধান বোঝাই করে হেঁটে যাওয়া তো দুরের কথা, শুধু মানুষ হাটাই কষ্টকর। দূর্গাপুর গ্রামের কৃষক নাসির সরদার বলেন, কাজের মান একেবারেই খারাপ হচ্ছে। কোথাও মাটি কাটা হচ্ছে আবার হচ্ছে না। আমরা কিছু বললে আমাদের কথায় তারা গুরত্ব দিচ্ছে না। যেন দেখার কেউ নাই।

স্ক্যাবেটর চালক সুমন বলেন, তলা ৩২ ফুট, স্লোব ১০-১৫ ফুট, গভীরতা ৩-৪ ফুট করা হচ্ছে। পানির মধ্য থেকে মাটি কাটা হচ্ছে। তবে গভীর হলেও সমান হচ্ছেনা। কারণ পানিতে দেখা যাচ্ছেনা। নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুধাংশু কুমার সরকার বলেন, ডেলটা প্লানের আওতায় এ খালটি খনন করা হচ্ছে। সাড়ে ৬ কিলোমিটারের মধ্যে ইতোমধ্যে সাড়ে ৩ কিলোমিটার খনন কাজ হয়েছে। তবে শিডিউলে যা আছে তা থেকে কিছুটা বেশিই খনন করা হচ্ছে। খালে কিছু দুর পর পর বাঁধ দিয়ে পানি শুকিয়ে ফেলা হচ্ছে। তবে বৃষ্টি কারণে সেখানে পানি জমে যাচ্ছে। কাজে কোন ধরনের অনিয়ম হচ্ছেনা।

এছাড়া পাড়ে যে মাটি রাখা আছে সেগুলো অনত্র সরিয়ে ফেলা হতে পারে অথবা মাটিগুলো সমান করে দিয়ে সেখানে গাছ লাগানো হতে পারে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com